রাজকুমারী পঞ্চ পুষ্পা
নবনীতা দেব সেন
রাজার পাঁচ রাণী। পাঁচ পাঁচটি রাণী থাকলে কি হবে রাজা নিঃসন্তান। এ রাজার বাড়ি যেন বাড়ি নয়, মাঠঘাট। করছে, ধূধূ করছে। ছেলে নেই, পুলে নেই। এমন বাড়িতে কখনাে মন বসে? রাজার মনমেজাজ তিরিক্ষি! পাঁচ রাণী যেন চোর হয়ে থাকেন। একদিন এক সন্ন্যাসী ভিক্ষে চাইতে রাজবাড়ির এসে দাঁড়ালেন। পাঁচ রাণী ছুটে গেলেন পাদ্য অর্থ নিয়ে। সন্ন্যাসীর ধূলাে ধুইয়ে, রেশমী আঁচলে মুছিয়ে, যেন সােনা পা করে দিলেন।
সন্ন্যাসী অনেক দূর হেঁটে আসছেন তাে, সেই হিন্দুকুশ পর্বত থেকে। সব ক্লান্তি যেন দূর হয়ে গেল রাণীমাদের এক রাণীমা বাতাস করছেন, এক রাণীমা পদসেবা করছেন, এক রাণীমা ফলমূল ধুয়ে এনে শ্বেতপাথরের থালায় সাজিয়ে দিচ্ছেন, এক রাণীমা গরম দুধ জড়িয়ে গেলাসে ভবে দিচ্ছেন। এক রাণীমা আসন পেতে দিচ্ছেন সন্ন্যাসী খুব খুশি হয়ে আশীর্বাদ বড়াে ভালাে মেয়ে, তােমাদের মেয়ে যেন তােমাদের ঠিক এমনি করেই যত্ন রাণীমা তখন
হাপুস নয়নে কেঁদে বললেন"থাকলে তাে করবে? মেয়ে কোথায়?” সন্ন্যাসী তখন ওঁর বুলি থেকে পাঁচটি পারিজাত কুসুম বের করে পাঁচ রাণীকে দিলেন। বললেন—“পরশুদিন দোলপূর্ণিমা। মধ্যরাত্রে নদীতে স্নান করে, শুদ্ধ বস্ত্র পরে, এই পাঁচটি ফুল তােমরা সোনার ঘটের মধ্যে ফেলে, দোলমঞ্চে বসিয়ে রেখে। পাঁচ দিন পরে দেখাে, কী হয়। পাঁচ রাণী তা ভীষণ খুশি।
তাঁরা ছুটে গিয়ে সােনার ঘট গড়তে দিলেন স্যাকরাকে। দোলপূর্ণিমার চাদ যখন মাঝগগনে, সেই মধ্যরাত্রে তারা নদীতে স্নান করে এসে ঘটটির মধ্যে পাঁচটি ফুল ফেলে সেই ঘট দোলমঞ্চে স্থাপন করলেন।
পাঁচ দিন পরে ভােরবেলা দোলমঞ্চে ছুটে গেছেন পাঁচ রাণী। দেখেন ঘটের মধ্যে পরমা সুন্দরী একটি মেয়ে খেলা করছে। রাণীদের খুশি আর ধরে না। দোল-পূর্ণিমার চাঁদের মতােই তার রূপ ফেটে পড়েছে, গায়ে পারিজাত কুসুমের সুগন্ধ। মায়ের নাম রাখলেন পঞ্চপুষ্পা।
মেয়েকে দেখে কোথায় গেল রাজার সেই তিরিক্ষি স্বভাব? রাজার হাসি খুশি যেন উথলে পড়ছে। রাজসভায় আনন্দের বান ডেকেছে। রাজকুমারী পঞ্চ পুষ্পা মায়েদের যে সংসারের সব কাজে নিপুণ হয়ে উঠলেন,
আর বাবার যত্নে পৃথিবীর সব শাস্ত্রেও তেমনি পারদর্শিনী হলেন। কিন্তু তার ওজন পাঁচটি পারিজাত কুসুমের সমানই রইল। আর বাড়ল না। এমন গুণী কন্যার জন্য পাত্র পাবেন কোথা থেকে রাজামশাই? কত পাত্র আসে, রাজপুত্রেরা, ম্ত্রিপুত্রেরা, পণ্ডিতপুত্রেরা, সদাগরপুত্রেরা, রাজামশায়ের আর কাউকেই পচ্ছন্দ হয় না। শেষে রাজা ঘােষাণা করলেন, যে-পাত্র এসে কন্যার ওজন কত বলে দিতে পারবেন, তার হাতেই কন্যা সম্প্রদান করা হবে।
কিন্তু চেষ্টা করেও যে বলতে না পারবে, তার শাস্তি, চিরদিনের জন্য কারাগারে বন্দী থাকতে হবে। এদিকে পঞ্চপুষ্পার ওজন কত, সেই সব খবর তার বাবা মায়েরা ছাড়া জগতে আ কেউই জানত না।
শুভদিন দেখে কানাড়া বাজিয়ে রাজামশাই তো স্বয়ম্বর সভা ডাকলেন। দেশ-দেশান্তর থেকে এক হাজার দুর্বার সাহসী রাজপুত্র এলেন কিন্তু কেউই আর কন্যার ওজন বলতে পারেন না। সবাইকে রাখবার জন্য তখন মস্তবড় এক কারাগার বানাতে হল।
আলাদা লােকজন রাখা হলো, সেই কারাগার টা ঝাড়পোঁছ তে। আলাদা রান্নাঘর হলাে, আলাদা ঠাকুর রাখতে হলাে স্বয়ংবর সভার বন্দীদের পুষতেই যেন রাজ্যের যজ্ঞিবাড়ি পড়ে গেল। মাথা নেড়ে মন্ত্রিমশাই বললেন—“রাজামশাই
আর তাে স্বয়স্বর ডাকা চলবে না! এবার থেকে যে নিজে আসবে খবর শুনে, শুধু সেই আসবে। নইলে এই ফেল করা পাত্রদের পুষতে পুষতেই তাে রাজভাগ্ডার শূন্য হয়ে যাবে। তারপর থেকে রাজকুমারী পঞ্চপুষ্পার জন্য আর পাত্র খোঁজা হয় না।
রাজকুমারী আপন মনে থাকেন। ছবি আঁকেন, মূর্তি গড়েন, গান করেন, বীণা বাজান আর সকাল বেলায় নানা বিষয়ের পণ্ডিতদের সঙ্গে বসে বিশ্বের যত কিছু জ্ঞান। বিজ্ঞান শিক্ষা করেন।
একদিন রাজবাড়িতে এক সন্ন্যাসী ক্লান্ত হয়ে এলেন। রাজকুমারী পঞ্চপুষ্প তখন বীজগণিতের একটা জটিল অঙ্কের সমাধান খুঁজছেন, সন্ন্যাসীকে মােটে দেখতেই পেলেন না। সন্ন্যাসী বারবার ডাকলেন। ডাক শুনতে পেয়ে রাণীমা বেরিয়ে এলেন। এসে দেখেন আরে, এই তাে সেই মহান্ সন্ন্যাসী যার কৃপায় তারা কন্যা পেয়েছেন। সন্ন্যাসীকে পেয়ে রাণীদের আনন্দ ধরে না। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে প্রণাম করলেন। সন্ন্যাসী বললেন
-কই মা, তােমাদের মেয়েটা কোথায়? রাণীমা বললেন মেয়ে মানে? আমাদের তো একটিই মেয়ে।
কেন? পাঁচটি ফুল দিলুম, একটি মেয়ে কেন? পাঁচটি ফুল পাঁচটি ঘটে
রাখেনি। নারীরা হায় হায় করে উঠলেন।
আমরা তো বুঝতে পারিনি সন্ন্যাসী ঠাকুর। আমরা ভেবেছি সবগুলি ফুল একটি ঘটেই রাখতে হবে।
সন্ন্যাসী বললেনবড় মুশকিল হল। এখন পাঁচ কন্যার মত গুণ নিয়ে যে
কন্যার জন্মেছে, তার যােগ্য বর পাব কোথায়? -পাত্র পাচ্ছিনাই তাে। পাত্ররা সবাই ফেরে , কারাগারে শুয়ে রাজভােগ
খাচ্ছেন।
তাই বল! সব পাত্তর ফেল করেছে? ও-সেইজন্যই মেয়ে আমার ডাক শােনেনি! পাঁচ পারিজিত ফুলের গুণ নিয়ে একটিমাত্র মানুষ জন্মেছে, তার মনে কি শান্তি আছে? বরং ওকেই যুবরাজ করে দাও। রাজ্য পরিচালনায় ভার মাথায় পড়লেই সব ঠিক হয়ে যাবে। রাজা বরং সিংহাসন থেকে নেমে বিশ্রাম করুন। চোখ কপালে তুলে পাঁচ রাণীমা বললেন—সে কি কথা! মেয়ের বিয়ে হবে
? জামাই হবে না? নাতি নাতনীর মুখ দেখা হবে না?
হবে হবে। সময় মতন সবই হবে। পঞ্চপুষ্পাকে এবার সন্ন্যাসীর কাছে ডেকে নিয়ে আসা হলাে। পঞ্চপুষ্প খুব যত্ন করে তাকে সেবা করলে। বার বার মাপ চাইলে ডাক শুনতে না পাওয়ার জন্য। ইনি তাে দুর্বাসা নন। এই ভালােমানুষ সন্ন্যাসী অভিশাপ তো দিলেন না, মাপ করে দিলেন। উপরন্তু যাবার সময়ে পঞ্চপুষ্পার হাতে তার জটার একটি লম্বা চুল দিয়ে বলেছিলে কখনো মুশকিলে পড়লে, এই জটাকেশকে জিজ্ঞেস কোরাে, সে সুবুদ্ধি দেবে।
রাজামশাই বুড়াে হয়েছেন। রাজ্য আর ভাল লাগে না। সন্ন্যাসীর কথা শুনে তার আনন্দ হলাে। তিনি পরদিনই শুভমুহূর্ত খুঁজে, মেয়েকে সিংহাসনে বসিয়ে দিয়ে তপস্যা করতে বনে চলে গেলেন। পাঁচ রাণীর মনে শান্তি নেই। ঐটুকুনি মেয়ে, যেন যেন টুনটুনি পাখির প্রাণ, এমনি হালকাপলকা, এমনি পরী পরী, পাঁচটা পারিজাত ফুলের সমান যার ওজন। তাকে কিনা বসানাে হলাে রাজ্য শাসনের মতন একটা ভারী কাজে।
রাজকন্যা কিন্তু খুব খুশি। এতদিনে তার এত লেখাপড়া শেখা কাজে লাগবে। রােজ সিংহাসনে বসে রাজকন্যা বিচার করেন। রাজ্য শাসনে তার জুড়ি নেই বােঝা গেল। বাবার চেয়েও দক্ষ। দেশের লােক খুব খুশি। শুকনাে ক্ষেতে জল দেবার জন্যে নালা খােদাই করা হলাে।
দূর নদীর জল গাঁয়ে-গাঁয়ে চলে এল, ক্ষেতে সােনা ঢলে পড়ল। ফল বাগানের পােকাদের উৎপাত বন্ধ করা হলাে ওষুধ লাগিয়ে গাছের পাতায়। গাছে গাছে ফল উপচে পড়ল। রাস্তার ধারে ধারে সাধু সন্ন্যাসী, বণিক সদাগর, পথচারীদের বিশ্রামের জন্যে ঘর তৈরী হলাে, জলসত্র হলাে। কুকুর খোঁড়া হলাে।
কন্যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ কে নয়? বাচ্চাদের জন্যে পাড়ায় পাড়ায় পাঠশালা হলাে, রোদ্দুরের মধ্যে তেপান্তর মাঠ পেরিয়ে তাদের আর দূরে দূরে পণ্ডিতদের বাড়ি পড়তে যেতে হয় না। সব বাচ্চা ছেলে মেয়েরা দেখতে না দেখতে অ আ ক খ শিখে ফেলল।
রাজকন্যার সবই ভাল, তবুও পাঁচ রাণীর মনে সুখ নেই। তাদের কেবল জামাই-জামাই মন করে। একদিন রাজামশাই তপস্যা শেষ করে বলেন যাই দেখে আসি মেয়েটা
কেমন রাজ্যপাট করছে।
রাজ্যে ঢুকে তাে রাজা অবাক! নতুন নতুন রাস্তাঘাট, ক্ষেতে ক্ষেতে ফসল, বাগানে ফল, দোকানে দোকানে মালপত্তর চারিদিকে কত কুয়াে, কত পুকুর, পথিকদের বিশ্রামঘর, পাড়ায় পাড়ায় স্কুলে কি তার সেই রাজ্য? সব লােকের মুখে হাসি। তিনি খুশি হয়ে ভাবলেন যাক, তবে আর রাজপুত্তুর খুজতে হবে না, যে কোনাে একটি ভাল ছেলে পেলেই জামাই করা যাবে। মেয়ে তো আমার পাঁচ রাজপুত্তরের সমান রাজ্যপাট করছে।
রাজা এবার দেশে দেশে পাত্র খুঁজতে বেরুলেন। রাত্রি হয়েছে, রাজা তখন পাশের রাজ্যে। এক চাষার বাড়িতে গিয়ে তিনি আশ্রয় চাইলেন। চাষীরা দুই বাপ বেটার সংসার। তার বৌ নেই। চাষী খুব যত্ন করলে, ফরসা মাদুর পেতে বিছানা করে দিলে, গরম গরম ভাত-আলু সেদ্ধ ডিম সেদ্ধ রেঁধে পেঁয়াজ-কাঁচালঙ্কা-সর্ষের
তেল দিয়ে তড়িৎ করে মেখে দিলে। তরমুজের শরবত করে দিলে। রাজা শুলেন। তার পায়ে তেল মালিশ করে দিতে চাষীর চোখ থেকে একবিন্দু
জল পড়ল রাজার পায়ে। রাজা চমকে উঠলেন।্ী পড়ল?
চাষা বললে ও কিছু নয়, চোখের জল। -সে কি কথা? চোখের জল পড়ে কেন? আমার মেয়ের রাজ্যে তাে
চোখের জল পড়ে না কারুর?
আমাদের রাজ্যেও পড়ত না। কিন্তু এখন পড়ে। রাজপুত্র যে ঘুমিয়ে পড়েছেন সাত বছর হলাে। বিদেশ থেকে দৈত্য এসে রাজারাণীকে মেরে ফেলেছে। রাজপুত্র বুকে অমরকবচ নিয়ে জন্মেছিলেন, আয়ু না ফুরােলে কেউ তাকে মারতে পারবে না। তাই তিনি মরেন নি, ঘুমিয়ে পড়েছেন। দৈত্য রােজ একজন করে ছেলে
খায়। তিন দিন বাদে আমার ছেলেকে খাবে। আমি বলছি আমাকে খাও' তা খাবে না। তার কচিমাংস চাই। রাজা নেই, কে আমাদের রক্ষা করবে। রাজামশাই শুনে খুব বিব্রত হলাে। কিন্তু তিনি তাে বুড়াে হয়েছেন, দৈত্যের
সঙ্গে যুদ্ধ করবার শক্তি তার নেই। ছেলেও নেই তার, কাকে পাঠাবেন দৈত্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে। পঞ্চ পুষ্পা যদিও বুদ্ধির জোর আছে, গায়ে তাে জোর নেই। রাজার আর ঘুম হলাে না। রাজা খুব ভােরবেলা উঠে নিজের রাজ্যে ফিরে এলেন। তাঁর = মাথায় এটা বুদ্ধি খেলে গেছে। তিনি বন্দীশালায় গিয়ে রাজবন্দীদের ডেকে বললেন
-পাশের রাজ্যের দৈত্যকে মারতে পারলে আজই তােমরা মুক্ত হয়ে যাবে। তখন একসঙ্গে এক হাজার দুঃসাহসী রাজপুত্তুরের হাতের তরােয়াল আর মুখের হাসি ঝলসে উঠল। বন্দীশালার দরজা খুলে দেওয়া হলাে। হাজার রাজপুত্তুর ঝন ঝনা করে পায়ের শেকল বাজিয়ে পাশের রাজ্যে চললেন।
দৈত্য তাে সেই শব্দ শুনেই ভয়ে কাঠ! আর যেই না এক হাজার খাপখােলা তরােয়াল রােদ্দুরের ঝলক লেগেছে, মনে হলে যেন দিগন্তে দৈবী আগুনের শিখা লকলক করে উঠল, যেন লক্ষ বিদ্যুৎ ঝলসে উঠল। দৈত্য তো বাপরে মারে বলে দুটি পালাচ্ছে।
পালাবে আর কোথায় শেকল দিয়ে বাঁধা এক হাজার রাজপুত্তর তাে প্রাসাদ ততক্ষণ ঘিরেই ফেলেছেন। দৈত্য টুকরাে টুকরাে হয়ে গেল নিমেষের মধ্যে, পঞ্চপুষ্পার ওজন
তারা জানে না বটে, কিন্তু তরােয়াল তাে চালাতে জানেন। মুহূর্তে পাশের রাজ্য ভয়মুক্ত হয়ে গেল। তখন রাজা প্রত্যেকের পায়ের শিকল কেটে, রাজপুত্রদের ঘােড়া, রথ, মুকুট, সমস্তই ফিরিয়ে দিলেন। তারা মনের আনন্দে যে যার রাজ্যে ফিরে গেলেন, পঞ্চপুষ্পার সঙ্গে চির বন্ধুত্বের শপথ পাতিয়ে। রাজকন্যার এখন এক হাজারটি বন্ধুরাজ্য গড়ে উঠল। প্লাস একটি।
মানে এই দৈত্য তাড়ানাে চাষাদের রাজ্যটি।কিন্তু এই রাজ্য নিয়ে একটা মুশকিল বাধলাে। রাজবাড়িতে কেউ নেই, রাজবংশেই কেউ
বেঁচে নেই। একমাত্র ঘুমন্ত রাজপুত্তুর ছাড়া। রাজ্যশাসন করবে কে? রাজামশাই বললেন একদিন না হয় আমিই রাজ্যটা দেখছি। কিন্তু কবে তোমাদের রাজপুত্রের ঘুম ভাঙবে? আমাকে তাে মেয়ের জন্যে পাত্র খুঁজতে যেতে হবে। প্রজারা কেউ জানেনা রাজপুত্রের এই ঘুম কতদিনের জন্য। সাতটা বছর তাে
পূর্ণ হয়ে গেছে। রাজা বললেন দাড়াও বাপু, আমার মেয়েকে বরং ডেকে নিয়ে এসাে, তার সঙ্গে আগে একটু পরামর্শ করি আমি।
তখন এদের প্রজারা গিয়ে সােনার রথে করে পঞ্চপুষ্পাকে ডেকে নিয়ে এল। রাজা আর পঞ্চপুষ্পা মিলে ঘুমন্ত রাজপুত্রকে দেখতে গেল। -ওহে, কী রূপ। যেন গােলাপী আকাশে ভোরের সূর্য ঘুমিয়ে পড়েছে।
গােলাপী ভেলভেটের বিছানায় রাজপুত্তুর, যেন গােলাপী ভেলভেটের খাপে ঝকঝকে রুপােলি ইস্পাতের তরোয়াল শুয়ে আছে। পঞ্চপুষ্পার চোখে জল এসে গেল। তিনি জটাকেশের শরণ নিলেন।
"হে জটাকেশ, বলাে এই রাজপুত্রের নিদ্রা ভঙ্গ হবে কিসে? জটাকেশ বললে—“মাথায় পাঁচটি পারিজাত ফুল ছুঁইয়ে দিলেই তিনি জেগে
উঠবেন।
এখন, পাঁচটি কেন, একটি ও পারিজাত ফুল পৃথিবীতে ফোটে না। হায় রে! এ যে অসাধ্যসাধনের ব্যাপার। সে তাে দেবতাদের বাগানের ফুল।
এ ঘুম তবে ভাঙবার নয়।ফিরে যাবার সময়ে পঞ্চপুষ্পা মায়াভরে রাজপুত্তুরের
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে গেল। আহা রে, এমন যার দেবতার মত রূপ, সেই
ছেলের জীবনটা ব্যর্থ হলাে।
পঞ্চ পুষ্পা পাঁচটি পুষ্পকলির মত আঙুল রাজপুত্রের কপালে রেখেছে
কি-না-রেখেছে, ঘুমন্ত রাজপুত্র তার বিশাল দুটি চোখ খুলে ভ্রমরকালাে মণি দুটি মেলে পঞ্চপুষ্পর মুখের দিকে অবাক হয়ে চাইলেন। তাই তাে! তাই তাে!’ রাজা বললেন সত্যিই তাে! সত্যিই তাে! আমাদের মেয়ে নিজেই তাে পাঁচটি পারিজাত ফুলের সমান, তাইতেই রাজপুত্রের
ঘুম ভেঙেছে। দুই দেশ জুড়ে উৎসব শুরু হয়ে গেল। দুই রাজ্যের প্রজারা সবাই বললে
রাজপুত্রের সঙ্গে রাজকন্যা পঞ্চপুষ্পার বিয়ে দেওয়া হােক। পাঁচ রাণী, রাজারও তাই মত। কিন্তু চোখের জলে বুক ভাসিয়ে মাথা নেড়ে রাজকন্যা বললেননা। সে কী? না কেন?
কন্যা বললেন পিতৃসত্য সবার আগে। রাজপুত্র যদি আমার ওজন বলতে পারেন, তবেই বিয়ে হবে। নইলে কারাগার।
ইতিমধ্যে বিয়ের যােগাড় শুরু করেছেন রাজ্য সুদ্ধ লোক -রাজা প্রজা সক্কলে। একথা শুনেই আবার দুই রাজ্যে কান্নার ঢেউ বয়ে গে:। ও প্রশ্নের উত্তর তাে কেউই জানে না।
কিন্তু ঘুমভাঙা রাজপুত্তুর অবাক হয়ে বললেন এই শ্ন? এ আর কঠিন
কী? রাজকন্যা পঞ্চ পুষ্পা তার পাঁচটি ফুলের সমান। ঘুম ভাঙাবামাত্র তিনি রাজাকে ওই কথাটিই বলতে শুনেছিলেন কিনা! তখন রাণীমাদের আহাদ আর দেখে কে? আর রাজারই বা সে কী গোঁফের নিচে মুচকি
হাসি। রাজবাড়িতে সানাই বেজে উঠলাে।
DoctypePDF.com is the best PDF search engine that helps you find PDF documents quickly and easily. You can search for free eBooks, research papers, guides, and more. Just type what you need, and DoctypePDF shows you results with the filetype PDF. It’s one of the best PDF search engines for students, researchers, and anyone looking to download PDF files for free.
ReplyDeleteDoctypePDF.com was created by Mir Abul Kashem, a blogger, web designer, and web developer from Dhaka, Bangladesh. He was born on October 5, 1998, and is known for building useful websites that help people find information easily.